আমার চোঁখে দেখা- নারী সমাজ


আমি ছোটোবেলা থেকে অনেক মেয়ে দেখেছি। সারি সারি সংখ্যায় তারা মুখ নামিয়ে পেরিয়ে যায়। দুঃখের মেয়ে। কষ্টের মেয়ে। তার অপমানিত চোখ। তার ভীতু পা। দুর্বল হাত। নিয়মের দড়ি বেঁধে তার অভ্যাস। গায়ে লাল লাল ছোপ পড়ে গেছে। সূর্যের আলোর অভাবে তার গায়ের ফর্সা চামড়া স্যাঁতসেঁতে। তাতে গুঁড়ি গুঁড়ি অবহেলার ছত্রাক জন্মেছে নরম ভেজা আবহাওয়ায়।
আমি। ছোটোবেলা থেকে। অনেক মেয়ে দেখেছি। তারা কখনো শুধুই মেয়েমানুষ। কখনো বউ। কখনো বোন। সমাজের ভেতরেও সমাজ, বৃত্তের মধ্যেও বৃত্ত তৈরি করে তারা। শেষে গোল দাগ কাটতে কাটতে এইটুকু মাটি পড়ে থাকে। কোনোমতে দুপা আঁটে তাতে। তাতে কী লজ্জা! কী লজ্জা! ও মেয়ের পায়ের পাতা লক্ষণরেখার মধ্যে আঁটে না। ভয়ে, লজ্জায়, অপমানে সেই মেয়ে আরও গুটিয়ে যায় নিজের মধ্যে। সেই বৃত্তের মধ্যে। ছোটো হতে হতে, নীচু হতে হতে হারিয়ে যায়।
জানো, আমি মেয়েদের দেখেছি। তারা কথা বলতে পারে না। চোখ তুলে তাকাতে লজ্জা পায়। ওড়নার স্কেল দিয়ে তারা সম্মান মাপে। তাদের সাইকেলের পাশাপাশি সাইকেল চালালে তারা লজ্জা পায়। তুমি তাদের দেখেছো? যারা ক্লাস এইট থেকে ফেসবুক করে, কিন্তু নিজের একটাও ছবি তাতে দেয় না। তাদের ওই মিথ্যে ডলপুতুলের ছবিতে তোমার অস্বস্তি হয় না? মনে হয় না ছিঁড়ে ফেলে দি ওই ছবি?
আমার দুর্ভাগ্য। আমি মেয়েদের চোখে শুধু ভয় দেখেছি। লজ্জা দেখেছি। অপমান দেখেছি। চুলের ঝুঁটি ধরে মার দেখেছি। প্রেম করার জন্য ঘরবন্দী হতে দেখেছি। মাসের পর মাস। নিজের প্রতি নিজের, পরিবারের, প্রেমিকের, আর সমাজের অবহেলা দেখেছি। আমি রোগা রোগা মেয়েদের চোখ থেকে স্বপ্ন কেড়ে তাতে অ্যানিমিয়া ভরে দিতে দেখেছি।
সেই জন্যই। আজ যখন ওই হাজার হাজার নামহীন সাদাকালো মুখের মাঝে একদুটো রঙীন মুখ দেখি, হাতে স্বপ্নের নিশান নিয়ে তাদের হাঁটতে দেখি, তখন খুব ভালো লাগে। খুব আনন্দ হয়। গর্বে বুক ভরে ওঠে। তারা কতো সবল। কতো স্বনির্ভর। কতোটা নির্ভীক। সমাজের বাঁধন ছেড়ে তারা নিজেদের পথে হাঁটছে।
বিশ্বের ক্ষেত্রে আমার দেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলে যেমন ঠোঁটদুটো নড়ে ওঠে, আঙুলগুলো তিরতির করে কাঁপে, চোখ নরম হয়ে আসে, তেমনি এইসব মেয়েদের জন্যও ভেতরটা ভরে ওঠে। এরাই যেন সেই সূর্য, যার ছোঁয়ায় প্রতিটা রান্নাঘরের কালো ধোঁয়া কেটে যাবে। মেয়েদের জীবন আর ঠিক করে দেবে না পুরুষেরা। তারাও নিজেদের ইচ্ছেমতো বিষয় নিয়ে পড়বে, নিজেদের পছন্দের ক্ষেত্রে চাকরি করবে, ঘুরতে যাবে ইচ্ছেমতো। মেয়েরা স্বাধীন হবে। সব মেয়েরা।
এই আবেগ নিয়েই নারীবাদের পক্ষে কথা বলি।
তোমার কাছে হয়তো হাজারো ‘ইস্যু’র ভেতরে একটা।
কিন্তু আমার কাছে নারীবাদ মানে আবেগ। যে আবেগে হৃদয় ভরে আসে। আমার মত বাচাল মানুষও কথা ভুলে যায়। চোখের কোণে জল চিকচিক করে। সেরকমই এক নির্বোধ, দুঃসাহসী আবেগ।
চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
দেখি আমার দামাল, দজ্জাল, দুরন্ত মেয়েরা নারী হয়ে উঠেছে। হাতে হাত ধরে এগিয়ে আসছে।
সমাজের

Comments

Popular posts from this blog

অভিজ্ঞতাবাদ

সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য