হেফাজতে ইসলাম আর নাস্তিক নিয়া এক গ্রাম্য চাচার ধ্যান ধারনা!

গ্রামে যাবার পর এক চাচার সাথে দেখা। সে খুবিই ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ। কখনো টিভি দেখে না। বিকেল বেলা হাটতে বের হয়েছি। হঠাৎ এক চায়ের দোকানে দেখি টিভির সামনে আমার এক পরিচিত চাচা বসে আছে, আমি একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি, দিগন্ত টিভি তে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ লাইভ দেখাচ্ছে! চাচা সহ আরও অনেকেই খুব আগ্রহের সাথে সবাই সেই প্রোগ্রাম দেখছে! সবাই একটু পর পর বক্তার সাথে সাথে তারাও নারাই তাকবীর আল্লাহুয়াকবার বলে শ্লোগান দিচ্ছে!
সন্ধ্যার দিকে সেই চাচার সাথে আবার দেখা। চাচা কে বললাম, আচ্ছা চাচা, আপনি কি এই হেফাজত ইসলামের ১৩ টা দাবী কে সমর্থন করেন? তখন চাচা বলে এতো দাবী টাবি বুঝিনা! এরা খাটি মুসলমান! দেশে ব্লগারে ভইরা গেছে, এরা যখন তখন আমাদের নবী কে নিয়া খারাপ মন্তব্য করে! এরা আল্লাহ্ কে বিশ্বাস করে না! আর এই হেফেজতে ইসলাম আমাদের ইসলাম কে এদের হাত থেকে রক্ষা করতে নেমেছে! এরা নাস্তিক দের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে! এরা দেশে ইসলামের শাসন চালু করবো! তাই এদেরকে সমর্থন দেওয়া অবশ্যই আমার ইমানি দায়িত্ব!
আমি বললাম, চাচা, তাহলে আপনি এক কাজ করেন। আপনার যে বড় মেয়ে টা আছে প্রাইমারী স্কুলে মাস্টারি করে তাকে মাস্টারি করা থেকে বিরত রাখেন। এবং আপনার যে আর একটা মেয়ে আছে নবম শ্রেণীতে পড়ে তাকেও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর দুইজনকেই ঘর থেকে বের হতে দিবেন না! চাচি সহ তাদের কে ঘর হতে বের হতে দিতে পারবেন না!
তখন চাচা আমার উপর রেগে গিয়ে বলল, তুমি এইসব কি কউ ভাতিজা? ওদের আমার ঘরে বন্দী করতে হবে কেন? তাছাড়া আমার বড় মেয়েটার মাস্টারির টাকায় আমি আজ একটু ভালো ভাবে চলতে পারি! তুমি কি আমার সাথে ফাইজলামি কর?
তখন আমি বললাম, আপনি আজ যাদের হেফাজতে ইসলাম বলতেছেন, যাদের কে আপনি সমর্থন দেওয়া ইমানি দায়িত্ব মনে করতেছেন, তাদের কাছে এটাই ইসলামী শাসন বেবস্থা!এবং এই ইসলামী শাসন বেবস্থা এতদিন আপনি মানেন নাই! তাই আপনিও ধরতে গেলে নাস্তিকের পর্যায় পড়েন! এবং তারা আজ যে তেরো দফা দাবী নিয়া সমাবেশ করতেছে, তার প্রথম দাবী হচ্ছে নারী শিক্ষা বন্ধ। এবং নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ! তার কারন মেয়ে মানুষ দেখলেই তাদের মেশিনের গিয়ার অটোমেটিক টপে উঠে যায়!
এখন চিন্তা করেন কি করবেন! চাচা আর একটা কথা বলি, আপনি যখন পাশের পাড়ার হিন্দু দের মালু বলে গালি দেন, তাদের ধর্ম নিয়া কটূক্তি করেন, মুসলমান রা যখন তাদের মন্দির ভাঙ্গে, তখন ধর্ম কে অবমাননা করা হয়না! কারন আপনার চোখে ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্ম নাই! নাস্তিকের চখেও ঠিক তেমনি কোন ধর্মই ধর্ম না! তারা ধর্মে বিশ্বাসী না! তাই নবী বা ধর্মকে নিয়া বা ইসলাম অথবা ধর্ম নিয়া যদি তারা কোন জুক্তিক আলোচনাও করে তাহলেও আপনাদের চোখে তা কটূক্তি হিসেবে ধরা পড়ে কেন?
চাচা পড়ে আর আমার সাথে উচ্চ বাচ্য না করে চলে গেলো!

Comments

Popular posts from this blog

অভিজ্ঞতাবাদ

সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য