ভারতের গণতান্ত্রিক বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা
ভারতের নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা___
উনিশ শতকের উপনিবেশিক যুগ থেকেই সতী, পরদা, স্থায়ী বৈধব্য ইত্যাদি পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়নমূলক সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে ভারতের নারীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন বিরোধী স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছেন। তাতে শিক্ষিত নারীদের মধ্যে পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীদের অধিকার সচেতনতা, এবং যৌথভাবে সংগঠিত হয়ে দাবি-দাওয়ার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুললেও সেগুলো নারীমুক্তির মূল শত্রু শোষণ-নিপীড়নমূলক পুঁজিবাদী-সামন্তবাদী পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদের কর্মসূচিতে সংগঠিত হয়নি।১৯৪০-এর দশকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেভাগাকৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে নিপীড়িত গরীব কৃষক নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উচ্চমাত্রার। তখন রাষ্ট্রীয় দমনেরপাল্টা আক্রমণের জন্য ‘নারীবাহিনী’ গঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১-তে তেলেঙ্গানা সশস্ত্র কৃষক উত্থান গড়ে ওঠে। বিপুল সংখ্যক নারীরা তাতে অংশগ্রহণ করেন। কৃষক ও আদিবাসী নারীগণ গেরিলা স্কোয়াডের সদস্য হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিবেষ্টনী দমনাভিযানের মুখে সেসকলনারীরা নির্মম নিপীড়ন সহ্য করে ও নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে নিয়ে বীরত্ব ও দৃঢ়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু সে সময়কার ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি শোষণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে উচ্ছেদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের লাইনে চালিত না হওয়ায় তা ব্যর্থ হয়।ভারতে বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন ও নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু হয় কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে নকশালবাড়ীর গণউত্থানের মধ্যদিয়ে। তাতে গরীব কৃষক স্বামী-পিতা-ভাইদের পাশাপাশি স্ত্রী-কন্যা-মা-বোন হিসেবে তেভাগা-তেলেঙ্গানার কৃষক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিক ভাবেই নারীরাও পূর্ণোদ্যমে যুক্ত হয়ে পড়েন। এবং ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারীযোদ্ধাগণ সচেতনভাবে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার জন্য অসাধারণ বীরত্ব ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের সংগ্রামে নারীদের ভূমিকাছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে সশস্ত্র স্কোয়াডের কমান্ডার হয়েছিলেন নারী। সেসকল নারী কমরেডগণ গরীবকৃষক জনগণকে ব্যাপকভাবে গণযুদ্ধের রাজনীতিতে সংগঠিত করেছিলেন। এবং জোতদার-মহাজনদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন। এই সংগ্রামে শ্রেণি শত্রুদের বুলেটের সামনে আত্মসমর্পণ না করে শহীদের মৃত্যু বরণ করে আজও যারা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে ঊজ্জ্বল হয়ে আছেন তাদের মধ্যে কমরেড পঞ্চাদি নির্মলা, কমরেড আনকাম্মা ও কমরেড স্বরস্বতী অন্যতম। কমরেড নির্মলা গরীবকৃষক পরিবার থেকে এসেছিলেন। তার স্বামী কমরেড পঞ্চাদি কৃষ্ণমূর্তি শহীদ হওয়ার পর তিনি তার সন্তানকে আত্মীয়দেরকাছে রেখে স্কোয়াড কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বীরত্বপূর্ণ শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। এই বিপ্লবী নারীদের ভূমিকা পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্যগত পরিচয়কে সরাসরি চ্যলেঞ্জ করে জনগণের বিপ্লবী নেতৃত্বের পরিচয়ে নতুনভাবে পরিচিতি দান করেছে। এবং বাস্তবে কৃষক নারীদেরকে পিতৃতন্ত্রকে অতিক্রমের পথ দেখিয়েছে।‘৭০-এর দশকে মাওবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা নিজেদেরকে যখন পুনর্গঠন করল এবং সামন্তবাদ বিরোধী কৃষক সংগ্রাম গড়তে শুরু করল সেই সংগ্রামে তখন নারীদের স্কোয়াডে অংশগ্রহণেরপুনরুত্থান ঘটল। মধ্যবিহারে সমতল এবং তেলেঙ্গানার গ্রামাঞ্চলে কৃষক আন্দোলন ঝড়ের বেগে বৃদ্ধি পেতে লাগল। তারসাথে নারী নিপীড়ন বিরোধী ইস্যুগুলো যুক্ত হতে লাগল। প্রথমদিকে নারী ইস্যুগুলোর মধ্যে ছিল জমিদারের জমিতে কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষত স্ত্রী কন্যাদের উপর জমিদারের সামন্তীয় অধিকারের বিরোধী আন্দোলন। জমিদারের লোকদের দ্বারা দুর্ব্যবহার, অনাহার এবং দারিদ্র্যের কারণে জমিদার ও তাদের ভৃত্যদের কাছে এসকল গরীব নারী সহজলভ্য ছিল। ‘ঐতিহ্য’র নামে এইসব দুর্ব্যবহার ও উৎপীড়ন অবসানের জন্য ১৯৭০ ও ১৯৮০’র দশকে বিহার ও তেলেঙ্গানায় বহু সহিংস আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এই সংগ্রামগুলোই বর্তমান নারী আন্দোলন বিকাশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এবং সচেতনভাবে নারীদেরকে বিপ্লবী সংগঠনে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। দন্ডকারণ্যে ‘ক্রান্তিকারী আদিবাসী মহিলা সংগঠন KAMS এবং তেলেঙ্গানায় মহিলা বিমুক্তি সংঘম যা পরে নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবী নারী সংগঠন- VMS গড়ে ওঠে।প্রথমদিকে প্রত্যেক স্কোয়াডে একজন করে নারী থাকতেন। কিন্তু নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় পার্টির নারীসংগঠক নারী সংগঠন গড়ার জন্য গ্রামাঞ্চলে যেতেন এবং নারী ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতেন। অনেক নারী তখন পুলিশের কোপানলে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন,নির্মম নিপীড়ন সহ্য করেছেন এবং ভুয়া সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৯৮ সালের প্রথম নয় মাসে এ অঞ্চলে ২৩ জন নারী শহীদ হয়েছেন।KAMS ও VMS কৃষকদের পাশাপাশি লড়াই চালায় এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবিতে সংগঠন তৈরী করতে থাকে। তারা পিতৃতন্ত্র এবং পুরুষের প্রাধান্যের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। স্ত্রী নির্যাতন, হয়রানি, যৌতুক, মাদকাসক্তি/ঘাটকা, বহুবিবাহ, স্ত্রী ত্যাগ ইত্যাদি ইস্যুতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়। কুসংস্কার, যাদু ইত্যাদির বিরুদ্ধেও ব্যাপক প্রচারণা চালায়। দমনরত পুলিশকে প্রতিরোধেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পুলিশ যখন কোন যুবককে গ্রেফতার করতে আসতো তখন নারীরা সবাই একজোট হয়ে পুলিশকে চারিদিক থেকে ঘিরে পিটিয়ে বিদায় করতেন। KAMS ও VMS নারীদেরকে নারী সংগঠনে যোগদানের জন্য সমাবেশ করতো এবং গ্রাম এলাকায় ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করতো। যখন সংগঠন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তখন নিয়মিত সম্মেলন হয়েছে। যেসব এলাকায় গুরুতর রাষ্ট্রীয় দমন চলেছে সেখানে সাময়িকভাবে তা বন্ধ থেকেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে দন্ডকারণ্যে নারীদের পৃথক ম্যাগাজিন ‘পরুমহিলা’ (সংগ্রামরত নারী) এবং তেলেঙ্গানায় ‘মহিলা বিমুক্তি’ (নারীমুক্তি) প্রকাশ হতে থাকে।উপরোক্ত নারী সংগঠন ও সংগ্রামে নারীদেরসহ শুধু জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নই হচ্ছে না বরং গ্রাম ও পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিকীকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সামন্তীয় সম্পর্ক চূর্ণ করে গ্রাম রাজ্য কমিটি, গ্রাম কমিটিগুলোর গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা জনগণের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এগুলো আরও দৃঢ় হয়েছে সেসব জায়গায় যেখানে ঘাঁটির লক্ষ্যে গেরিলা অঞ্চল ও প্রস্তুতিমূলক গেরিলা অঞ্চলে নয়া ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং নয়াগণতান্ত্রিক অর্থনীতির ভ্রূণ গঠনের সূচনা হয়েছে।এখন বুর্জোয়া মিডিয়ায় ভারতের ২৯টি রাজ্যের ২০টিরও বেশিরাজ্যে সিপিআই (মাওবাদী)র নেতৃত্বে শক্তিশালী গণযুদ্ধ গড়ে উঠেছে। ঘাঁটি এলাকা ও বহু গেরিলা অঞ্চল, বিশেষ গেরিলা অঞ্চল এবং নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভ্রণ হিসেবে“জনথান” অর্থাৎ প্রচলিত রাষ্ট্র ক্ষমতার বিপরীতে জনগণেরসরকার গড়ে উঠেছে। আর এই গণযুদ্ধের বড় একটি শক্তি হচ্ছে নিপীড়িত গ্রামীণ কৃষক নারী ও তাদের সংগঠন। প্রখ্যাত লেখিকা অরূন্ধতি রায়ের মতে মাওবাদীদের নারী সংগঠন ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ নারী সংগঠন, যাদের সদস্য সংখ্যা কয়েকবছর আগেই ছিল ৯০ হাজার। সিপিআই (মাওবাদী)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অনুরাধা ও কমরেড নর্মদা পর্যায়ক্রমেবিশাল এই নারী সংগঠনের প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন। কমরেড অনুরাধা ২০০৮ সালে গ্রামাঞ্চলে নারীদের প্রশিক্ষণপরিচালনাকালীন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঐ বছরই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনের কারণে সুচিকিৎসার অভাবে এই আজীবনবিপ্লবী নারী নেতৃত্বের মাত্র ৫৪ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ ঘটে। কমরেড নর্মদা ২০১২ সালে রাষ্ট্রীয় যৌথবাহিনীর সাথেসম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। ভারতীয় শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি ও তাদের রাষ্ট্র মাওবাদীদের এই বিপ্লবী সংগ্রামকে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রধান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে লক্ষাধিক যৌথবাহিনী মোতায়েন করে “অপারেশন গ্রীনহান্ট” নামে কয়েক বছর ধরে লাগাতার নির্মম দমনাভিযান পরিচালনা করছে। এই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনমূলক পরিস্থিতিতে পার্টির ‘পিপল্স লিবারেশন গেরিলা আর্মি’- PLGA ও গণমিলিশিয়ার ৬০% সদস্যই এখন নারী। শুধু তাই নয় কোথাও কোথাও আঞ্চলিক সামরিক কমিশন, স্পেশাল জোনাল কমিটি, প্লাটুন কমান্ডার, জনথান সরকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান দায়িত্বও পালন করছেন নারী কমরেডগণ। ফলে ভারতের গণযুদ্ধের প্রতিটি ঘটনায়ই জড়িয়ে আছে নারীদের ভূমিকা। আর তাই পুরুষ কমরেডদের নেতৃত্বদান, গ্রেফতার, মৃত্যু, আত্মত্যাগ, বীরত্বের পাশাপাশি নারীদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং নেতৃত্বদানের ঘটনা এখন দৈনন্দিন খবরে পরিণত হয়েছে। কাজেই ভারতে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার সাথেও নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।উনিশ শতকের উপনিবেশিক যুগ থেকেই সতী, পরদা, স্থায়ী বৈধব্য ইত্যাদি পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়নমূলক সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে ভারতের নারীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন বিরোধী স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছেন। তাতে শিক্ষিত নারীদের মধ্যে পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীদের অধিকার সচেতনতা, এবং যৌথভাবে সংগঠিত হয়ে দাবি-দাওয়ার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুললেও সেগুলো নারীমুক্তির মূল শত্রু শোষণ-নিপীড়নমূলক পুঁজিবাদী-সামন্তবাদী পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদের কর্মসূচিতে সংগঠিত হয়নি।১৯৪০-এর দশকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেভাগাকৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে নিপীড়িত গরীব কৃষক নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উচ্চমাত্রার। তখন রাষ্ট্রীয় দমনেরপাল্টা আক্রমণের জন্য ‘নারীবাহিনী’ গঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১-তে তেলেঙ্গানা সশস্ত্র কৃষক উত্থান গড়ে ওঠে। বিপুল সংখ্যক নারীরা তাতে অংশগ্রহণ করেন। কৃষক ও আদিবাসী নারীগণ গেরিলা স্কোয়াডের সদস্য হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিবেষ্টনী দমনাভিযানের মুখে সেসকলনারীরা নির্মম নিপীড়ন সহ্য করে ও নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে নিয়ে বীরত্ব ও দৃঢ়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু সে সময়কার ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি শোষণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে উচ্ছেদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের লাইনে চালিত না হওয়ায় তা ব্যর্থ হয়।ভারতে বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন ও নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু হয় কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে নকশালবাড়ীর গণউত্থানের মধ্যদিয়ে। তাতে গরীব কৃষক স্বামী-পিতা-ভাইদের পাশাপাশি স্ত্রী-কন্যা-মা-বোন হিসেবে তেভাগা-তেলেঙ্গানার কৃষক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিক ভাবেই নারীরাও পূর্ণোদ্যমে যুক্ত হয়ে পড়েন। এবং ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারীযোদ্ধাগণ সচেতনভাবে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার জন্য অসাধারণ বীরত্ব ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের সংগ্রামে নারীদের ভূমিকাছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে সশস্ত্র স্কোয়াডের কমান্ডার হয়েছিলেন নারী। সেসকল নারী কমরেডগণ গরীবকৃষক জনগণকে ব্যাপকভাবে গণযুদ্ধের রাজনীতিতে সংগঠিত করেছিলেন। এবং জোতদার-মহাজনদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন। এই সংগ্রামে শ্রেণি শত্রুদের বুলেটের সামনে আত্মসমর্পণ না করে শহীদের মৃত্যু বরণ করে আজও যারা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে ঊজ্জ্বল হয়ে আছেন তাদের মধ্যে কমরেড পঞ্চাদি নির্মলা, কমরেড আনকাম্মা ও কমরেড স্বরস্বতী অন্যতম। কমরেড নির্মলা গরীবকৃষক পরিবার থেকে এসেছিলেন। তার স্বামী কমরেড পঞ্চাদি কৃষ্ণমূর্তি শহীদ হওয়ার পর তিনি তার সন্তানকে আত্মীয়দেরকাছে রেখে স্কোয়াড কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বীরত্বপূর্ণ শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। এই বিপ্লবী নারীদের ভূমিকা পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্যগত পরিচয়কে সরাসরি চ্যলেঞ্জ করে জনগণের বিপ্লবী নেতৃত্বের পরিচয়ে নতুনভাবে পরিচিতি দান করেছে। এবং বাস্তবে কৃষক নারীদেরকে পিতৃতন্ত্রকে অতিক্রমের পথ দেখিয়েছে।‘৭০-এর দশকে মাওবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা নিজেদেরকে যখন পুনর্গঠন করল এবং সামন্তবাদ বিরোধী কৃষক সংগ্রাম গড়তে শুরু করল সেই সংগ্রামে তখন নারীদের স্কোয়াডে অংশগ্রহণেরপুনরুত্থান ঘটল। মধ্যবিহারে সমতল এবং তেলেঙ্গানার গ্রামাঞ্চলে কৃষক আন্দোলন ঝড়ের বেগে বৃদ্ধি পেতে লাগল। তারসাথে নারী নিপীড়ন বিরোধী ইস্যুগুলো যুক্ত হতে লাগল। প্রথমদিকে নারী ইস্যুগুলোর মধ্যে ছিল জমিদারের জমিতে কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষত স্ত্রী কন্যাদের উপর জমিদারের সামন্তীয় অধিকারের বিরোধী আন্দোলন। জমিদারের লোকদের দ্বারা দুর্ব্যবহার, অনাহার এবং দারিদ্র্যের কারণে জমিদার ও তাদের ভৃত্যদের কাছে এসকল গরীব নারী সহজলভ্য ছিল। ‘ঐতিহ্য’র নামে এইসব দুর্ব্যবহার ও উৎপীড়ন অবসানের জন্য ১৯৭০ ও ১৯৮০’র দশকে বিহার ও তেলেঙ্গানায় বহু সহিংস আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এই সংগ্রামগুলোই বর্তমান নারী আন্দোলন বিকাশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এবং সচেতনভাবে নারীদেরকে বিপ্লবী সংগঠনে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। দন্ডকারণ্যে ‘ক্রান্তিকারী আদিবাসী মহিলা সংগঠন KAMS এবং তেলেঙ্গানায় মহিলা বিমুক্তি সংঘম যা পরে নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবী নারী সংগঠন- VMS গড়ে ওঠে।প্রথমদিকে প্রত্যেক স্কোয়াডে একজন করে নারী থাকতেন। কিন্তু নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় পার্টির নারীসংগঠক নারী সংগঠন গড়ার জন্য গ্রামাঞ্চলে যেতেন এবং নারী ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতেন। অনেক নারী তখন পুলিশের কোপানলে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন,নির্মম নিপীড়ন সহ্য করেছেন এবং ভুয়া সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৯৮ সালের প্রথম নয় মাসে এ অঞ্চলে ২৩ জন নারী শহীদ হয়েছেন।KAMS ও VMS কৃষকদের পাশাপাশি লড়াই চালায় এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবিতে সংগঠন তৈরী করতে থাকে। তারা পিতৃতন্ত্র এবং পুরুষের প্রাধান্যের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। স্ত্রী নির্যাতন, হয়রানি, যৌতুক, মাদকাসক্তি/ঘাটকা, বহুবিবাহ, স্ত্রী ত্যাগ ইত্যাদি ইস্যুতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়। কুসংস্কার, যাদু ইত্যাদির বিরুদ্ধেও ব্যাপক প্রচারণা চালায়। দমনরত পুলিশকে প্রতিরোধেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পুলিশ যখন কোন যুবককে গ্রেফতার করতে আসতো তখন নারীরা সবাই একজোট হয়ে পুলিশকে চারিদিক থেকে ঘিরে পিটিয়ে বিদায় করতেন। KAMS ও VMS নারীদেরকে নারী সংগঠনে যোগদানের জন্য সমাবেশ করতো এবং গ্রাম এলাকায় ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করতো। যখন সংগঠন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তখন নিয়মিত সম্মেলন হয়েছে। যেসব এলাকায় গুরুতর রাষ্ট্রীয় দমন চলেছে সেখানে সাময়িকভাবে তা বন্ধ থেকেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে দন্ডকারণ্যে নারীদের পৃথক ম্যাগাজিন ‘পরুমহিলা’ (সংগ্রামরত নারী) এবং তেলেঙ্গানায় ‘মহিলা বিমুক্তি’ (নারীমুক্তি) প্রকাশ হতে থাকে।উপরোক্ত নারী সংগঠন ও সংগ্রামে নারীদেরসহ শুধু জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নই হচ্ছে না বরং গ্রাম ও পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিকীকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সামন্তীয় সম্পর্ক চূর্ণ করে গ্রাম রাজ্য কমিটি, গ্রাম কমিটিগুলোর গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা জনগণের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এগুলো আরও দৃঢ় হয়েছে সেসব জায়গায় যেখানে ঘাঁটির লক্ষ্যে গেরিলা অঞ্চল ও প্রস্তুতিমূলক গেরিলা অঞ্চলে নয়া ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং নয়াগণতান্ত্রিক অর্থনীতির ভ্রূণ গঠনের সূচনা হয়েছে।এখন বুর্জোয়া মিডিয়ায় ভারতের ২৯টি রাজ্যের ২০টিরও বেশিরাজ্যে সিপিআই (মাওবাদী)র নেতৃত্বে শক্তিশালী গণযুদ্ধ গড়ে উঠেছে। ঘাঁটি এলাকা ও বহু গেরিলা অঞ্চল, বিশেষ গেরিলা অঞ্চল এবং নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভ্রণ হিসেবে“জনথান” অর্থাৎ প্রচলিত রাষ্ট্র ক্ষমতার বিপরীতে জনগণেরসরকার গড়ে উঠেছে। আর এই গণযুদ্ধের বড় একটি শক্তি হচ্ছে নিপীড়িত গ্রামীণ কৃষক নারী ও তাদের সংগঠন। প্রখ্যাত লেখিকা অরূন্ধতি রায়ের মতে মাওবাদীদের নারী সংগঠন ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ নারী সংগঠন, যাদের সদস্য সংখ্যা কয়েকবছর আগেই ছিল ৯০ হাজার। সিপিআই (মাওবাদী)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অনুরাধা ও কমরেড নর্মদা পর্যায়ক্রমেবিশাল এই নারী সংগঠনের প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন। কমরেড অনুরাধা ২০০৮ সালে গ্রামাঞ্চলে নারীদের প্রশিক্ষণপরিচালনাকালীন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঐ বছরই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনের কারণে সুচিকিৎসার অভাবে এই আজীবনবিপ্লবী নারী নেতৃত্বের মাত্র ৫৪ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ ঘটে। কমরেড নর্মদা ২০১২ সালে রাষ্ট্রীয় যৌথবাহিনীর সাথেসম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। ভারতীয় শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি ও তাদের রাষ্ট্র মাওবাদীদের এই বিপ্লবী সংগ্রামকে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রধান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে লক্ষাধিক যৌথবাহিনী মোতায়েন করে “অপারেশন গ্রীনহান্ট” নামে কয়েক বছর ধরে লাগাতার নির্মম দমনাভিযান পরিচালনা করছে। এই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনমূলক পরিস্থিতিতে পার্টির ‘পিপল্স লিবারেশন গেরিলা আর্মি’- PLGA ও গণমিলিশিয়ার ৬০% সদস্যই এখন নারী। শুধু তাই নয় কোথাও কোথাও আঞ্চলিক সামরিক কমিশন, স্পেশাল জোনাল কমিটি, প্লাটুন কমান্ডার, জনথান সরকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান দায়িত্বও পালন করছেন নারী কমরেডগণ। ফলে ভারতের গণযুদ্ধের প্রতিটি ঘটনায়ই জড়িয়ে আছে নারীদের ভূমিকা। আর তাই পুরুষ কমরেডদের নেতৃত্বদান, গ্রেফতার, মৃত্যু, আত্মত্যাগ, বীরত্বের পাশাপাশি নারীদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং নেতৃত্বদানের ঘটনা এখন দৈনন্দিন খবরে পরিণত হয়েছে। কাজেই ভারতে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার সাথেও নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উনিশ শতকের উপনিবেশিক যুগ থেকেই সতী, পরদা, স্থায়ী বৈধব্য ইত্যাদি পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়নমূলক সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে ভারতের নারীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন বিরোধী স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছেন। তাতে শিক্ষিত নারীদের মধ্যে পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীদের অধিকার সচেতনতা, এবং যৌথভাবে সংগঠিত হয়ে দাবি-দাওয়ার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুললেও সেগুলো নারীমুক্তির মূল শত্রু শোষণ-নিপীড়নমূলক পুঁজিবাদী-সামন্তবাদী পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদের কর্মসূচিতে সংগঠিত হয়নি।১৯৪০-এর দশকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেভাগাকৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে নিপীড়িত গরীব কৃষক নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উচ্চমাত্রার। তখন রাষ্ট্রীয় দমনেরপাল্টা আক্রমণের জন্য ‘নারীবাহিনী’ গঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১-তে তেলেঙ্গানা সশস্ত্র কৃষক উত্থান গড়ে ওঠে। বিপুল সংখ্যক নারীরা তাতে অংশগ্রহণ করেন। কৃষক ও আদিবাসী নারীগণ গেরিলা স্কোয়াডের সদস্য হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিবেষ্টনী দমনাভিযানের মুখে সেসকলনারীরা নির্মম নিপীড়ন সহ্য করে ও নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে নিয়ে বীরত্ব ও দৃঢ়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু সে সময়কার ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি শোষণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে উচ্ছেদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের লাইনে চালিত না হওয়ায় তা ব্যর্থ হয়।ভারতে বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন ও নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু হয় কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে নকশালবাড়ীর গণউত্থানের মধ্যদিয়ে। তাতে গরীব কৃষক স্বামী-পিতা-ভাইদের পাশাপাশি স্ত্রী-কন্যা-মা-বোন হিসেবে তেভাগা-তেলেঙ্গানার কৃষক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিক ভাবেই নারীরাও পূর্ণোদ্যমে যুক্ত হয়ে পড়েন। এবং ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারীযোদ্ধাগণ সচেতনভাবে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার জন্য অসাধারণ বীরত্ব ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের সংগ্রামে নারীদের ভূমিকাছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে সশস্ত্র স্কোয়াডের কমান্ডার হয়েছিলেন নারী। সেসকল নারী কমরেডগণ গরীবকৃষক জনগণকে ব্যাপকভাবে গণযুদ্ধের রাজনীতিতে সংগঠিত করেছিলেন। এবং জোতদার-মহাজনদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন। এই সংগ্রামে শ্রেণি শত্রুদের বুলেটের সামনে আত্মসমর্পণ না করে শহীদের মৃত্যু বরণ করে আজও যারা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে ঊজ্জ্বল হয়ে আছেন তাদের মধ্যে কমরেড পঞ্চাদি নির্মলা, কমরেড আনকাম্মা ও কমরেড স্বরস্বতী অন্যতম। কমরেড নির্মলা গরীবকৃষক পরিবার থেকে এসেছিলেন। তার স্বামী কমরেড পঞ্চাদি কৃষ্ণমূর্তি শহীদ হওয়ার পর তিনি তার সন্তানকে আত্মীয়দেরকাছে রেখে স্কোয়াড কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বীরত্বপূর্ণ শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। এই বিপ্লবী নারীদের ভূমিকা পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্যগত পরিচয়কে সরাসরি চ্যলেঞ্জ করে জনগণের বিপ্লবী নেতৃত্বের পরিচয়ে নতুনভাবে পরিচিতি দান করেছে। এবং বাস্তবে কৃষক নারীদেরকে পিতৃতন্ত্রকে অতিক্রমের পথ দেখিয়েছে।‘৭০-এর দশকে মাওবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা নিজেদেরকে যখন পুনর্গঠন করল এবং সামন্তবাদ বিরোধী কৃষক সংগ্রাম গড়তে শুরু করল সেই সংগ্রামে তখন নারীদের স্কোয়াডে অংশগ্রহণেরপুনরুত্থান ঘটল। মধ্যবিহারে সমতল এবং তেলেঙ্গানার গ্রামাঞ্চলে কৃষক আন্দোলন ঝড়ের বেগে বৃদ্ধি পেতে লাগল। তারসাথে নারী নিপীড়ন বিরোধী ইস্যুগুলো যুক্ত হতে লাগল। প্রথমদিকে নারী ইস্যুগুলোর মধ্যে ছিল জমিদারের জমিতে কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষত স্ত্রী কন্যাদের উপর জমিদারের সামন্তীয় অধিকারের বিরোধী আন্দোলন। জমিদারের লোকদের দ্বারা দুর্ব্যবহার, অনাহার এবং দারিদ্র্যের কারণে জমিদার ও তাদের ভৃত্যদের কাছে এসকল গরীব নারী সহজলভ্য ছিল। ‘ঐতিহ্য’র নামে এইসব দুর্ব্যবহার ও উৎপীড়ন অবসানের জন্য ১৯৭০ ও ১৯৮০’র দশকে বিহার ও তেলেঙ্গানায় বহু সহিংস আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এই সংগ্রামগুলোই বর্তমান নারী আন্দোলন বিকাশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এবং সচেতনভাবে নারীদেরকে বিপ্লবী সংগঠনে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। দন্ডকারণ্যে ‘ক্রান্তিকারী আদিবাসী মহিলা সংগঠন KAMS এবং তেলেঙ্গানায় মহিলা বিমুক্তি সংঘম যা পরে নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবী নারী সংগঠন- VMS গড়ে ওঠে।প্রথমদিকে প্রত্যেক স্কোয়াডে একজন করে নারী থাকতেন। কিন্তু নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় পার্টির নারীসংগঠক নারী সংগঠন গড়ার জন্য গ্রামাঞ্চলে যেতেন এবং নারী ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতেন। অনেক নারী তখন পুলিশের কোপানলে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন,নির্মম নিপীড়ন সহ্য করেছেন এবং ভুয়া সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৯৮ সালের প্রথম নয় মাসে এ অঞ্চলে ২৩ জন নারী শহীদ হয়েছেন।KAMS ও VMS কৃষকদের পাশাপাশি লড়াই চালায় এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবিতে সংগঠন তৈরী করতে থাকে। তারা পিতৃতন্ত্র এবং পুরুষের প্রাধান্যের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। স্ত্রী নির্যাতন, হয়রানি, যৌতুক, মাদকাসক্তি/ঘাটকা, বহুবিবাহ, স্ত্রী ত্যাগ ইত্যাদি ইস্যুতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়। কুসংস্কার, যাদু ইত্যাদির বিরুদ্ধেও ব্যাপক প্রচারণা চালায়। দমনরত পুলিশকে প্রতিরোধেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পুলিশ যখন কোন যুবককে গ্রেফতার করতে আসতো তখন নারীরা সবাই একজোট হয়ে পুলিশকে চারিদিক থেকে ঘিরে পিটিয়ে বিদায় করতেন। KAMS ও VMS নারীদেরকে নারী সংগঠনে যোগদানের জন্য সমাবেশ করতো এবং গ্রাম এলাকায় ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করতো। যখন সংগঠন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তখন নিয়মিত সম্মেলন হয়েছে। যেসব এলাকায় গুরুতর রাষ্ট্রীয় দমন চলেছে সেখানে সাময়িকভাবে তা বন্ধ থেকেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে দন্ডকারণ্যে নারীদের পৃথক ম্যাগাজিন ‘পরুমহিলা’ (সংগ্রামরত নারী) এবং তেলেঙ্গানায় ‘মহিলা বিমুক্তি’ (নারীমুক্তি) প্রকাশ হতে থাকে।উপরোক্ত নারী সংগঠন ও সংগ্রামে নারীদেরসহ শুধু জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নই হচ্ছে না বরং গ্রাম ও পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিকীকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সামন্তীয় সম্পর্ক চূর্ণ করে গ্রাম রাজ্য কমিটি, গ্রাম কমিটিগুলোর গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা জনগণের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এগুলো আরও দৃঢ় হয়েছে সেসব জায়গায় যেখানে ঘাঁটির লক্ষ্যে গেরিলা অঞ্চল ও প্রস্তুতিমূলক গেরিলা অঞ্চলে নয়া ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং নয়াগণতান্ত্রিক অর্থনীতির ভ্রূণ গঠনের সূচনা হয়েছে।এখন বুর্জোয়া মিডিয়ায় ভারতের ২৯টি রাজ্যের ২০টিরও বেশিরাজ্যে সিপিআই (মাওবাদী)র নেতৃত্বে শক্তিশালী গণযুদ্ধ গড়ে উঠেছে। ঘাঁটি এলাকা ও বহু গেরিলা অঞ্চল, বিশেষ গেরিলা অঞ্চল এবং নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভ্রণ হিসেবে“জনথান” অর্থাৎ প্রচলিত রাষ্ট্র ক্ষমতার বিপরীতে জনগণেরসরকার গড়ে উঠেছে। আর এই গণযুদ্ধের বড় একটি শক্তি হচ্ছে নিপীড়িত গ্রামীণ কৃষক নারী ও তাদের সংগঠন। প্রখ্যাত লেখিকা অরূন্ধতি রায়ের মতে মাওবাদীদের নারী সংগঠন ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ নারী সংগঠন, যাদের সদস্য সংখ্যা কয়েকবছর আগেই ছিল ৯০ হাজার। সিপিআই (মাওবাদী)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অনুরাধা ও কমরেড নর্মদা পর্যায়ক্রমেবিশাল এই নারী সংগঠনের প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন। কমরেড অনুরাধা ২০০৮ সালে গ্রামাঞ্চলে নারীদের প্রশিক্ষণপরিচালনাকালীন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঐ বছরই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনের কারণে সুচিকিৎসার অভাবে এই আজীবনবিপ্লবী নারী নেতৃত্বের মাত্র ৫৪ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ ঘটে। কমরেড নর্মদা ২০১২ সালে রাষ্ট্রীয় যৌথবাহিনীর সাথেসম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। ভারতীয় শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি ও তাদের রাষ্ট্র মাওবাদীদের এই বিপ্লবী সংগ্রামকে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রধান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে লক্ষাধিক যৌথবাহিনী মোতায়েন করে “অপারেশন গ্রীনহান্ট” নামে কয়েক বছর ধরে লাগাতার নির্মম দমনাভিযান পরিচালনা করছে। এই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনমূলক পরিস্থিতিতে পার্টির ‘পিপল্স লিবারেশন গেরিলা আর্মি’- PLGA ও গণমিলিশিয়ার ৬০% সদস্যই এখন নারী। শুধু তাই নয় কোথাও কোথাও আঞ্চলিক সামরিক কমিশন, স্পেশাল জোনাল কমিটি, প্লাটুন কমান্ডার, জনথান সরকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান দায়িত্বও পালন করছেন নারী কমরেডগণ। ফলে ভারতের গণযুদ্ধের প্রতিটি ঘটনায়ই জড়িয়ে আছে নারীদের ভূমিকা। আর তাই পুরুষ কমরেডদের নেতৃত্বদান, গ্রেফতার, মৃত্যু, আত্মত্যাগ, বীরত্বের পাশাপাশি নারীদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং নেতৃত্বদানের ঘটনা এখন দৈনন্দিন খবরে পরিণত হয়েছে। কাজেই ভারতে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার সাথেও নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।উনিশ শতকের উপনিবেশিক যুগ থেকেই সতী, পরদা, স্থায়ী বৈধব্য ইত্যাদি পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়নমূলক সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে ভারতের নারীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন বিরোধী স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছেন। তাতে শিক্ষিত নারীদের মধ্যে পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীদের অধিকার সচেতনতা, এবং যৌথভাবে সংগঠিত হয়ে দাবি-দাওয়ার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুললেও সেগুলো নারীমুক্তির মূল শত্রু শোষণ-নিপীড়নমূলক পুঁজিবাদী-সামন্তবাদী পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদের কর্মসূচিতে সংগঠিত হয়নি।১৯৪০-এর দশকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেভাগাকৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে নিপীড়িত গরীব কৃষক নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উচ্চমাত্রার। তখন রাষ্ট্রীয় দমনেরপাল্টা আক্রমণের জন্য ‘নারীবাহিনী’ গঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১-তে তেলেঙ্গানা সশস্ত্র কৃষক উত্থান গড়ে ওঠে। বিপুল সংখ্যক নারীরা তাতে অংশগ্রহণ করেন। কৃষক ও আদিবাসী নারীগণ গেরিলা স্কোয়াডের সদস্য হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিবেষ্টনী দমনাভিযানের মুখে সেসকলনারীরা নির্মম নিপীড়ন সহ্য করে ও নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে নিয়ে বীরত্ব ও দৃঢ়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু সে সময়কার ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি শোষণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে উচ্ছেদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের লাইনে চালিত না হওয়ায় তা ব্যর্থ হয়।ভারতে বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন ও নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু হয় কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে নকশালবাড়ীর গণউত্থানের মধ্যদিয়ে। তাতে গরীব কৃষক স্বামী-পিতা-ভাইদের পাশাপাশি স্ত্রী-কন্যা-মা-বোন হিসেবে তেভাগা-তেলেঙ্গানার কৃষক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিক ভাবেই নারীরাও পূর্ণোদ্যমে যুক্ত হয়ে পড়েন। এবং ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারীযোদ্ধাগণ সচেতনভাবে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার জন্য অসাধারণ বীরত্ব ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের সংগ্রামে নারীদের ভূমিকাছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে সশস্ত্র স্কোয়াডের কমান্ডার হয়েছিলেন নারী। সেসকল নারী কমরেডগণ গরীবকৃষক জনগণকে ব্যাপকভাবে গণযুদ্ধের রাজনীতিতে সংগঠিত করেছিলেন। এবং জোতদার-মহাজনদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন। এই সংগ্রামে শ্রেণি শত্রুদের বুলেটের সামনে আত্মসমর্পণ না করে শহীদের মৃত্যু বরণ করে আজও যারা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে ঊজ্জ্বল হয়ে আছেন তাদের মধ্যে কমরেড পঞ্চাদি নির্মলা, কমরেড আনকাম্মা ও কমরেড স্বরস্বতী অন্যতম। কমরেড নির্মলা গরীবকৃষক পরিবার থেকে এসেছিলেন। তার স্বামী কমরেড পঞ্চাদি কৃষ্ণমূর্তি শহীদ হওয়ার পর তিনি তার সন্তানকে আত্মীয়দেরকাছে রেখে স্কোয়াড কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বীরত্বপূর্ণ শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। এই বিপ্লবী নারীদের ভূমিকা পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্যগত পরিচয়কে সরাসরি চ্যলেঞ্জ করে জনগণের বিপ্লবী নেতৃত্বের পরিচয়ে নতুনভাবে পরিচিতি দান করেছে। এবং বাস্তবে কৃষক নারীদেরকে পিতৃতন্ত্রকে অতিক্রমের পথ দেখিয়েছে।‘৭০-এর দশকে মাওবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা নিজেদেরকে যখন পুনর্গঠন করল এবং সামন্তবাদ বিরোধী কৃষক সংগ্রাম গড়তে শুরু করল সেই সংগ্রামে তখন নারীদের স্কোয়াডে অংশগ্রহণেরপুনরুত্থান ঘটল। মধ্যবিহারে সমতল এবং তেলেঙ্গানার গ্রামাঞ্চলে কৃষক আন্দোলন ঝড়ের বেগে বৃদ্ধি পেতে লাগল। তারসাথে নারী নিপীড়ন বিরোধী ইস্যুগুলো যুক্ত হতে লাগল। প্রথমদিকে নারী ইস্যুগুলোর মধ্যে ছিল জমিদারের জমিতে কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষত স্ত্রী কন্যাদের উপর জমিদারের সামন্তীয় অধিকারের বিরোধী আন্দোলন। জমিদারের লোকদের দ্বারা দুর্ব্যবহার, অনাহার এবং দারিদ্র্যের কারণে জমিদার ও তাদের ভৃত্যদের কাছে এসকল গরীব নারী সহজলভ্য ছিল। ‘ঐতিহ্য’র নামে এইসব দুর্ব্যবহার ও উৎপীড়ন অবসানের জন্য ১৯৭০ ও ১৯৮০’র দশকে বিহার ও তেলেঙ্গানায় বহু সহিংস আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এই সংগ্রামগুলোই বর্তমান নারী আন্দোলন বিকাশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এবং সচেতনভাবে নারীদেরকে বিপ্লবী সংগঠনে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। দন্ডকারণ্যে ‘ক্রান্তিকারী আদিবাসী মহিলা সংগঠন KAMS এবং তেলেঙ্গানায় মহিলা বিমুক্তি সংঘম যা পরে নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবী নারী সংগঠন- VMS গড়ে ওঠে।প্রথমদিকে প্রত্যেক স্কোয়াডে একজন করে নারী থাকতেন। কিন্তু নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় পার্টির নারীসংগঠক নারী সংগঠন গড়ার জন্য গ্রামাঞ্চলে যেতেন এবং নারী ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতেন। অনেক নারী তখন পুলিশের কোপানলে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন,নির্মম নিপীড়ন সহ্য করেছেন এবং ভুয়া সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৯৮ সালের প্রথম নয় মাসে এ অঞ্চলে ২৩ জন নারী শহীদ হয়েছেন।KAMS ও VMS কৃষকদের পাশাপাশি লড়াই চালায় এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবিতে সংগঠন তৈরী করতে থাকে। তারা পিতৃতন্ত্র এবং পুরুষের প্রাধান্যের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। স্ত্রী নির্যাতন, হয়রানি, যৌতুক, মাদকাসক্তি/ঘাটকা, বহুবিবাহ, স্ত্রী ত্যাগ ইত্যাদি ইস্যুতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়। কুসংস্কার, যাদু ইত্যাদির বিরুদ্ধেও ব্যাপক প্রচারণা চালায়। দমনরত পুলিশকে প্রতিরোধেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পুলিশ যখন কোন যুবককে গ্রেফতার করতে আসতো তখন নারীরা সবাই একজোট হয়ে পুলিশকে চারিদিক থেকে ঘিরে পিটিয়ে বিদায় করতেন। KAMS ও VMS নারীদেরকে নারী সংগঠনে যোগদানের জন্য সমাবেশ করতো এবং গ্রাম এলাকায় ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করতো। যখন সংগঠন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তখন নিয়মিত সম্মেলন হয়েছে। যেসব এলাকায় গুরুতর রাষ্ট্রীয় দমন চলেছে সেখানে সাময়িকভাবে তা বন্ধ থেকেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে দন্ডকারণ্যে নারীদের পৃথক ম্যাগাজিন ‘পরুমহিলা’ (সংগ্রামরত নারী) এবং তেলেঙ্গানায় ‘মহিলা বিমুক্তি’ (নারীমুক্তি) প্রকাশ হতে থাকে।উপরোক্ত নারী সংগঠন ও সংগ্রামে নারীদেরসহ শুধু জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নই হচ্ছে না বরং গ্রাম ও পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিকীকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সামন্তীয় সম্পর্ক চূর্ণ করে গ্রাম রাজ্য কমিটি, গ্রাম কমিটিগুলোর গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা জনগণের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এগুলো আরও দৃঢ় হয়েছে সেসব জায়গায় যেখানে ঘাঁটির লক্ষ্যে গেরিলা অঞ্চল ও প্রস্তুতিমূলক গেরিলা অঞ্চলে নয়া ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং নয়াগণতান্ত্রিক অর্থনীতির ভ্রূণ গঠনের সূচনা হয়েছে।এখন বুর্জোয়া মিডিয়ায় ভারতের ২৯টি রাজ্যের ২০টিরও বেশিরাজ্যে সিপিআই (মাওবাদী)র নেতৃত্বে শক্তিশালী গণযুদ্ধ গড়ে উঠেছে। ঘাঁটি এলাকা ও বহু গেরিলা অঞ্চল, বিশেষ গেরিলা অঞ্চল এবং নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভ্রণ হিসেবে“জনথান” অর্থাৎ প্রচলিত রাষ্ট্র ক্ষমতার বিপরীতে জনগণেরসরকার গড়ে উঠেছে। আর এই গণযুদ্ধের বড় একটি শক্তি হচ্ছে নিপীড়িত গ্রামীণ কৃষক নারী ও তাদের সংগঠন। প্রখ্যাত লেখিকা অরূন্ধতি রায়ের মতে মাওবাদীদের নারী সংগঠন ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ নারী সংগঠন, যাদের সদস্য সংখ্যা কয়েকবছর আগেই ছিল ৯০ হাজার। সিপিআই (মাওবাদী)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অনুরাধা ও কমরেড নর্মদা পর্যায়ক্রমেবিশাল এই নারী সংগঠনের প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন। কমরেড অনুরাধা ২০০৮ সালে গ্রামাঞ্চলে নারীদের প্রশিক্ষণপরিচালনাকালীন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঐ বছরই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনের কারণে সুচিকিৎসার অভাবে এই আজীবনবিপ্লবী নারী নেতৃত্বের মাত্র ৫৪ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ ঘটে। কমরেড নর্মদা ২০১২ সালে রাষ্ট্রীয় যৌথবাহিনীর সাথেসম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। ভারতীয় শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি ও তাদের রাষ্ট্র মাওবাদীদের এই বিপ্লবী সংগ্রামকে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রধান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে লক্ষাধিক যৌথবাহিনী মোতায়েন করে “অপারেশন গ্রীনহান্ট” নামে কয়েক বছর ধরে লাগাতার নির্মম দমনাভিযান পরিচালনা করছে। এই তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনমূলক পরিস্থিতিতে পার্টির ‘পিপল্স লিবারেশন গেরিলা আর্মি’- PLGA ও গণমিলিশিয়ার ৬০% সদস্যই এখন নারী। শুধু তাই নয় কোথাও কোথাও আঞ্চলিক সামরিক কমিশন, স্পেশাল জোনাল কমিটি, প্লাটুন কমান্ডার, জনথান সরকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান দায়িত্বও পালন করছেন নারী কমরেডগণ। ফলে ভারতের গণযুদ্ধের প্রতিটি ঘটনায়ই জড়িয়ে আছে নারীদের ভূমিকা। আর তাই পুরুষ কমরেডদের নেতৃত্বদান, গ্রেফতার, মৃত্যু, আত্মত্যাগ, বীরত্বের পাশাপাশি নারীদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং নেতৃত্বদানের ঘটনা এখন দৈনন্দিন খবরে পরিণত হয়েছে। কাজেই ভারতে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার সাথেও নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Comments
Post a Comment