আমরা ঢাবিয়ান
ঢাবিয়ানদের গর্ব বিষয়ক কিছু শ্রুতি বাতাসে ভাসে।
"ঢাবির ক্যান্টিন বয় যদি জানে আপনি বহিরাগত তাহলে সামনের চুলে আঙ্গুল দিয়ে পরিপাটি করতে করতে ভাব নিয়ে বলবে,ভাই কিছু জানার থাকলে তাড়াতাড়ি বলেন। আমার টাইম নাই।"
"ঢাবির বাদাম বিক্রেতার কথা বলার সময় মুখে খৈ ফোটে। বাদাম বেচে ডেইলি দুইশো টাকা আর্ন হয়।আগামী মাস থেকে আরেকটা বিজনেস শুরু করব। কথা বলার সময় ওর মুখে যে তাপ জেনারেট হয় তা দিয়ে কয়েক কেজি বাদাম ভেজে ফেলা সম্ভব।"
""প্যান্ট পরতে না জানা ছেলেটি এখানে এডমিশন নেবার পর অন্যদের প্যান্ট পরা শিখায়।""
একটা গল্প বলি।
আমরা তখন সেকেন্ড ইয়ারে। কোন এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পত্রিকায় একটা কলাম লেখে।ঢাবি এবং এর স্টুডেন্টদের অবজ্ঞা করে। অামাদের আইন বিভাগের এক স্যার এর প্রতিত্তোরে একটা কলাম লেখে। সেই কলামের শেষ প্যারায় স্যার লিখেছিলেন, "হাতি শুয়ে থাকলেও অন্য প্রানী থেকে বড় ই থাকে"।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করার সময় এর শিক্ষক ছাত্র অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুল গর্বের জাইগাটা এভয়েড করে। আমাদের মত নিম্নবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য ঢাবি মুলত অনেক বড় আশ্রয়।
এখানে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ ছেলেদের ছোটবেলায় মায়ের কোলে শুয়ে বাড়ির ফুটো চালের ফাক দিয়ে চাঁদ দেখার অভিজ্ঞতা আছে। বৃষ্টির ছাট থেকে বাঁচতে জড়োসড়ো হয়ে নির্ঘুম রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা আছে। গ্রামের মেঠোপথে তাইরে নাইরে করে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে।
লুকিয়ে বিড়ি খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ধরা খেয়ে কান মলা খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ভরা জলে ডুব দিয়ে চোখ লাল করার অভিজ্ঞতা আছে। পিয়েজ মরিজ দিয়ে একগামলা ভাত সাবার করে দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
এদের বাবাদের অনেক গুলো সেক্রিফাইসের গল্প আছে। অনেকবার পরাজয়ের অভিজ্ঞতা আছে। নিজেরা না খেয়ে থেকে হাসিমুখে বলবে, সাবধানে চলিস। এ মাসে দুইশো টাকা বেশি পাঠিয়েছি। পছন্দের কিছু কিনে নিস। সুন্দর একটা সংবাদ আছে। লাল গাইটার বাছুর হইছে। লাল টকটকা। জম্মের পর দিব্যি খেলা করছে।
এদের মায়েদের মুষ্টির চাল জমানোর ছোট ছোট সঞ্চয় অনেকগুলো সুখ বুনে দেয় । ছিড়ে যাওয়া শাড়ির আচলে অনেকগুলো কষ্ট ঢাকা থাকে। খারাপ হওয়া চোখ দিয়ে ছেলের জন্য নকশিকাথায় একে দেয় ভালবাসা।
বাড়ি থেকে ফেরার সময় মায়ের আচলের খুট থেকে গুজে দেওয়া দুইশো টাকা তুলনাহীন। বড় বড় নোটের ভাজে আদৌও এগুলো বেমানান হবে?
ঢাকায় এসে পাঁচটা পকেট ওলা প্যান্ট পড়া। প্রতিটা পকেটে ভাব নেওয়ার কারুকাজ। স্কিন টাইট টি শার্ট হালকা পাতলা শরীরে পড়ে বারবার দর্পনে মুখ। ফুটপখ থেকে একশ টাকার রে- বান চশমা কিনে অজয় দেবগন হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে।
মাস শেষ হবার আগেই চোখের সামনে এক আকাশ অনিশ্চয়তা। হিসেবের খাতায় অগাধ কাটাকুটি। ধার শোধ করাটা হয় দুঃসহ। টিউশনি চলে যাওয়া চোখের সামনে অন্ধকার । ফিকে হওয়া দুঃস্বপ্নের মাঝে কিছু চোখজল। হারিয়ে যেতে যেতে চোখজল মুছে ঘুরে দাঁড়ানো।
টিএসসির মুষল বৃষ্টি আমাদের আবেগের বাধ ভাঙ্গে। জ্বরের ভয় তুচ্ছ হয়। আমাদের চোখে কাকেরা হয়ে উঠে শহুরে সৌন্দর্য। এক প্লেট খাবারে চার হাত ডুবিয়ে খেয়ে আমাদের স্বপ্নগুলো ডুবে যায়না।
নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুলত অনেক বড় উপাসনালয়। অনেক বড় প্রার্থনা স্থল।
শুভ জম্মদিন প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়।।
"ঢাবির ক্যান্টিন বয় যদি জানে আপনি বহিরাগত তাহলে সামনের চুলে আঙ্গুল দিয়ে পরিপাটি করতে করতে ভাব নিয়ে বলবে,ভাই কিছু জানার থাকলে তাড়াতাড়ি বলেন। আমার টাইম নাই।"
"ঢাবির বাদাম বিক্রেতার কথা বলার সময় মুখে খৈ ফোটে। বাদাম বেচে ডেইলি দুইশো টাকা আর্ন হয়।আগামী মাস থেকে আরেকটা বিজনেস শুরু করব। কথা বলার সময় ওর মুখে যে তাপ জেনারেট হয় তা দিয়ে কয়েক কেজি বাদাম ভেজে ফেলা সম্ভব।"
""প্যান্ট পরতে না জানা ছেলেটি এখানে এডমিশন নেবার পর অন্যদের প্যান্ট পরা শিখায়।""
একটা গল্প বলি।
আমরা তখন সেকেন্ড ইয়ারে। কোন এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পত্রিকায় একটা কলাম লেখে।ঢাবি এবং এর স্টুডেন্টদের অবজ্ঞা করে। অামাদের আইন বিভাগের এক স্যার এর প্রতিত্তোরে একটা কলাম লেখে। সেই কলামের শেষ প্যারায় স্যার লিখেছিলেন, "হাতি শুয়ে থাকলেও অন্য প্রানী থেকে বড় ই থাকে"।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করার সময় এর শিক্ষক ছাত্র অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুল গর্বের জাইগাটা এভয়েড করে। আমাদের মত নিম্নবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য ঢাবি মুলত অনেক বড় আশ্রয়।
এখানে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ ছেলেদের ছোটবেলায় মায়ের কোলে শুয়ে বাড়ির ফুটো চালের ফাক দিয়ে চাঁদ দেখার অভিজ্ঞতা আছে। বৃষ্টির ছাট থেকে বাঁচতে জড়োসড়ো হয়ে নির্ঘুম রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা আছে। গ্রামের মেঠোপথে তাইরে নাইরে করে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে।
লুকিয়ে বিড়ি খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ধরা খেয়ে কান মলা খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ভরা জলে ডুব দিয়ে চোখ লাল করার অভিজ্ঞতা আছে। পিয়েজ মরিজ দিয়ে একগামলা ভাত সাবার করে দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
এদের বাবাদের অনেক গুলো সেক্রিফাইসের গল্প আছে। অনেকবার পরাজয়ের অভিজ্ঞতা আছে। নিজেরা না খেয়ে থেকে হাসিমুখে বলবে, সাবধানে চলিস। এ মাসে দুইশো টাকা বেশি পাঠিয়েছি। পছন্দের কিছু কিনে নিস। সুন্দর একটা সংবাদ আছে। লাল গাইটার বাছুর হইছে। লাল টকটকা। জম্মের পর দিব্যি খেলা করছে।
এদের মায়েদের মুষ্টির চাল জমানোর ছোট ছোট সঞ্চয় অনেকগুলো সুখ বুনে দেয় । ছিড়ে যাওয়া শাড়ির আচলে অনেকগুলো কষ্ট ঢাকা থাকে। খারাপ হওয়া চোখ দিয়ে ছেলের জন্য নকশিকাথায় একে দেয় ভালবাসা।
বাড়ি থেকে ফেরার সময় মায়ের আচলের খুট থেকে গুজে দেওয়া দুইশো টাকা তুলনাহীন। বড় বড় নোটের ভাজে আদৌও এগুলো বেমানান হবে?
ঢাকায় এসে পাঁচটা পকেট ওলা প্যান্ট পড়া। প্রতিটা পকেটে ভাব নেওয়ার কারুকাজ। স্কিন টাইট টি শার্ট হালকা পাতলা শরীরে পড়ে বারবার দর্পনে মুখ। ফুটপখ থেকে একশ টাকার রে- বান চশমা কিনে অজয় দেবগন হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে।
মাস শেষ হবার আগেই চোখের সামনে এক আকাশ অনিশ্চয়তা। হিসেবের খাতায় অগাধ কাটাকুটি। ধার শোধ করাটা হয় দুঃসহ। টিউশনি চলে যাওয়া চোখের সামনে অন্ধকার । ফিকে হওয়া দুঃস্বপ্নের মাঝে কিছু চোখজল। হারিয়ে যেতে যেতে চোখজল মুছে ঘুরে দাঁড়ানো।
টিএসসির মুষল বৃষ্টি আমাদের আবেগের বাধ ভাঙ্গে। জ্বরের ভয় তুচ্ছ হয়। আমাদের চোখে কাকেরা হয়ে উঠে শহুরে সৌন্দর্য। এক প্লেট খাবারে চার হাত ডুবিয়ে খেয়ে আমাদের স্বপ্নগুলো ডুবে যায়না।
নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুলত অনেক বড় উপাসনালয়। অনেক বড় প্রার্থনা স্থল।
শুভ জম্মদিন প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়।।
Comments
Post a Comment