বাংলার স্লোগান_বাংলার কথা।

ভুমিকা বা প্রাক কথায় চলে গেল দুই পর্ব, আসল কথায় আসা হলনা, ভাবছি সরাসরি অবিভক্ত ভারত, পরবর্তীতে পাকিস্তান, ভারত, সবশেষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শ্লোগান ও দেওয়ালের লিখন সোজা সাপটা ভাবে বন্ধুদের জন্য উপস্থাপন করি, আমরা জানি যে ব্রিটিশ আমলে ছিল স্বরাজ আন্দোলন,ব্রিটিশ রাজতন্ত্রর বেড়ি থেকে মুক্তির আন্দোলন, বাংলা কথায় ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন—তখনকার শ্লোগান বা দেওয়াল লিখন ছিল নিম্ন রূপ —-বিশেষ করে
কংগ্রেসিরা এসব শ্লোগান দিত এবং দেওয়ালে লিখত,
বন্দে মাতরম, জয় হিন্দ, কুইট ইনডিয়া ,
যখন ভারতীয়রা স্বাধীনতার জন্য মরিয়া তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে
তাঁদের মুখের শ্লোগান ছিল বিদ্রুপাত্তক,
যেমন সারে গামা পাধানি,
বোম ফেলেছে জাপানী,
বোমের মধ্যে কেউটো সাপ,
ব্রিটিশ বলে বাপরে বাপ,
তখন সাম্যবাদীরা শ্লোগান বা দেওয়ালে লিখতেন,
“মাঙ্গ রাহে হ্যাঁয় হ্যাঁর ইনসান,
রোটি কাপড়া আউর মাকান,
ওদিকে মুসলিম লীগ শ্লোগান দিচ্ছে,
নারায়ে তাকবীর, আল্লাউ হু আকবর, ”
মু মে বিড়ি, হাত মে পান,
লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান,
পাকিস্তান হয়ে যাওয়ার পর শ্লোগানের ভাষা গেল পাল্টে —
বাংলা ভাষা কায়েম কর কায়েম কর,
যুক্ত ফ্রন্টের একুশ দফা মানতে হবে মানতে হবে,
বাংলা আমার ভাষা কেড়ে নিতে দেব না,
আমার বর্ণ মালা অ ,আ , ক, খ, কেড়ে নিতে দেবনা,
সামরিক আইন, সামরিক আইন, মানি না মানব না,
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি,
এটা প্রথম কবিতা, তারপর দেওয়াল লিখন, সবশেষে অমর একুশের গান ,
আটান্ন পেরিয়ে বাষট্টি , তখন দেওয়ালের লিখন–
হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল কর, বাতিল কর,
ছেষট্টি তে শ্লোগান উঠলো ছয় দফা, ছয় দফা, মানতে হবে, মানতে হবে,
মনু মিয়ার রক্ত বৃথা যেতে দেব না, জয় বাংলা,
উনসত্তুরের শ্লোগান– এগার দফা, এগার দফা, মানতে হবে, মানতে হবে,
জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো ,
তোমার নেতা, আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব,
জয় বাংলা,
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মানিনা মানিনা,
আসাদের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা,
পিণ্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা,
তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা,
এরপর তো শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হলেন, এই উপাধি হয়ে গেল প্রতিটি বাঙ্গালীর হৃদয় উৎসারিত উপাধি, বাঙ্গালীর একদার প্রিয় নেতা চিত্ত রঞ্জন দাশকে দেওয়া হয়েছিল দেশবন্ধু উপাধি,
তারই ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবকে দেওয়া হল বঙ্গবন্ধু উপাধি, ঐতিহাসিক ভাবে এটা সু প্রতিষ্ঠিত যে তাঁরা বাঙ্গালীর বন্ধু, আসলো– স্বাধীনতার ডাক,ডাক দিলেন বঙ্গবন্ধু—–
শ্লোগান উঠলো বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, তুমি কে আমি কে বাঙ্গালী, বাঙ্গালী,
দেশ স্বাধীন হোল ,
শ্লোগানের ভাষাও
পরিবর্তন হোল,
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে দেওয়ালে লেখা হোল —
বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত– শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে,
শাসনতন্ত্রের ৪ নীতির বাস্তবায়ন চাই, কৃষক শ্রমিক দিচ্ছে ডাক কায়েম কর মুজিব বাদ,
ক্ষেতে কিষান কলে মজুর জোট বাঁধ জোট বাঁধ,
লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই,
রাজাকার, আলবদর হুঁশিয়ার সাবধান, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র- গনতন্ত্র, ধর্মনিরেপেক্ষতা,জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র,
এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ,
বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ তখন শ্লোগান শুরু করেছে- বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েম কর,ওঁরাও শ্লোগান দেয় লড়াই, লড়াই, লড়াই, চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, শোষিতের লড়াই চলছে চল্ বে,
গনভবন না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, জাতীয় বিপ্লবী সরকার কায়েম কর , আর এ শ্লোগান গুলো ছিল মুলত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের , ওদের যে দেওয়ালের লিখনিটি আমি তখন খুব উপভোগ করতাম, সেটি ছিল–
খেয়েছে হোঁচট, হয়েছে খোঁড়া , বন্ধু পিতার লাল ঘোড়া,
দেশে তখন চরম বিশৃঙ্খলা, যার জন্য দায়ী করা যায় জাসদকে আর সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টিকে, বঙ্গবন্ধু বিরক্ত হয়ে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করেছিলেন”লাল ঘোড়া দাবড়ায়ে দেব” কিন্তু সেদিন অর্থাৎ ১৯৭২সালে জাসদ বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দিয়েই দেওয়াল লিখনি লিখেছে, যেমন বঙ্গবন্ধুর বন্ধু, জাতীর পিতার পিতা, স্বীকার করেই দেওয়ালে লিখেছে— বন্ধু পিতার লাল ঘোড়া,
পচাত্তরের পর শ্লোগান দিল বিরোধিরা– কম্বল কাটা মুজিব কোট , আর দেব না নৌকায় ভোট ,
অবশ্য এটা বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশা থেকে এই শ্লোগান দিয়ে আসছিলো, এরপর ওরা শ্লোগান দিল-
হাসিনা রে হাসিনা, তোর কথায় নাচি না, তোর বাপের কথায় নাইচ্চা, দেশ দিছি বেইচ্চা,
শহীদ জিয়া আছে মিশে, শ্যামল বাংলার ধানের শিষে,
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, সবাই বলে খালেদা জিয়া,
অন্য দিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা শ্লোগান দিল—

এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে,
হাসিনা তোমার ভয় নাই, আমরা আছি লাখ ভাই,
একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার,
শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার,
আমরা সবাই মুজিব সেনা,ভয় করি না বুলেট বোমা,
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ,
কলেবর আর বাড়াবো না, ভারত, পাকিস্তানের কয়েকটি মজার শ্লোগান উল্লেখ করে এ লেখার ইতি টানবো ,১৯৭২ সালে যখন নক্সাল বাড়ী আন্দোলন ব্যর্থ হোল , পশ্চিম বাংলার জনগন নির্বাচন মুখী হোল, তখন রাগে,ক্ষোভে, নক্সালিরা শ্লোগান দিল এবং দেওয়ালে লিখল– শুয়োরের বাচ্চার জনগন, রইলো তোদের নির্বাচন, আমরা চলি বৃন্দাবন, ১৯৭৭ সালে মিসেস গান্ধী জরুরী অবস্থা জারী করলে- বিরোধীরা শ্লোগান দিল, দেওয়ালে লিখল—
দিল্লী থেকে এল গাই, সঙ্গে বাছুর সি, পি, আই,
সেচ্ছা বন্ধাকরনের তিন দালাল, ইন্দিরা, সঞ্জয়, বংশীলাল,
ইন্দিরা হটাও, ইন্দ্রিয় বাঁচাও,
পাকিস্তানে দ্বিতীয় বার যখন বেনজির ভুটটো ক্ষমতায় আসেন, তখন নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে শ্লোগান দেওয়া হয়েছিলো, “ইয়া আল্লাহ ইয়া রাসুল, বেনজির বেকসুর”
“না বাপ শরীফ, না মা শরীফ, নাম হ্যায় নেওয়াজ শরীফ”
শেষ করছি, জেনারেল এরশাদের পক্ষের এক কৌতুক পূর্ণ শ্লোগান দিয়ে—-”
কে বলে এরশাদ স্বৈরাচার,
তাঁর মুখে জুতা মার,
এরশাদ মোদের অহংকার ”

Comments

Popular posts from this blog

অভিজ্ঞতাবাদ

সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য